Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২nd সেপ্টেম্বর ২০২১

চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড

 

ছবি: সিইউএফএল এর প্ল্যান্ট সাইট।

 

​চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল)

 

চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) কর্ণফুলী নদীর মোহনায় চট্টগ্রাম জেলায় আনোয়ারা উপজেলাধীন রাঙ্গাদিয়া নামক স্থানে অবস্থিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ প্রিল্ড ‘ইউরিয়া সার’ উৎপাদনের লক্ষ্যে কারখানাটি স্থাপন করে। প্রাথমিকভাবে উৎপাদিত ইউরিয়া সার বিদেশে রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অজনের লক্ষ্যে সিইউএফএল স্থাপন করা হয় এবং সেভাবে অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়। সফলভাবে উৎপাদন শুরুর কয়েক বছর বিদেশে রপ্তানী করা হলেও পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে কারখানা থেকে উৎপাদিত সার দেশেই ব্যবহার করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, সিইউএফএল এর উৎপাদিত ইউরিয়া প্রিল্ড আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এই সারের চাহিদা বরাবরই আকাশচুম্বী।

 

১৯৮৫ সালের অক্টোবর মাসে সিইউএফএল কারখানার কন্সট্রাকশনের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৭ সালের ২৯ শে অক্টোবর কারখানাটি পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করে। ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে সিইউএফএল বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। কারখানাটির জেনারেল কন্ট্রাক্টর মেসার্স টয়ো ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, জাপান। অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের প্রসেস লাইসেন্সর M.W Kellog, USA যা বর্তমানে KBR, USA এবং ইউরিয়া প্ল্যান্টের প্রসেস লাইসেন্সর TEC-MTC-'D' Improved, Japan।

 

সিইউএফএল- এর প্রতিষ্ঠাকালীন দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১০০০ মে. টন অ্যামোনিয়া এবং ১৭০০ মে. টন ইউরিয়া অর্থাৎ বাৎসারিক উৎপাদন ক্ষমতা যথাক্রমে ৩,৩০,০০০ মে. টন অ্যামোনিয়া এবং ৫,৬১,০০০ মে. টন ইউরিয়া (বছরে ৩৩০ দিন চালু হিসেবে)।

 

সিইউএফএল কারখানাটি প্রায় প্রতি বছরই নির্ধারিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে এই কারখানায় সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল ৩,৩৪,০০০ মে. টন অ্যামোনিয়া এবং ৫,৮৫,৭৯১ মে. টন ইউরিয়া এবং একই অর্থবছরে কারখানাটি একটানা সর্বোচ্চ ২৪৮ দিন অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট এবং ২১৭ দিন ইউরিয়া প্ল্যান্ট চালু ছিল। শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত কারখানাটি সন্তোষজনকভাবে চালু আছে এবং নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সার উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে কৃষি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।

 

প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় হয়েছিল ১৫৫৬.৩০ কোটি টাকা যার মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমান ১১৫৯.৯১ এবং স্থানীয় মুদ্রার পরিমান ছিল ৩৯৬.৩৯ কোটি টাকা। ৭টি দাতা সংস্থা যথাক্রমে IDA, CIDA, ADB, ADFAED, ISDB, OECF এবং SFD বৈদেশিক মুদ্রার এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় মুদ্রার যোগান দেয়। ৩৯০.৭৭ একর প্রকল্প এলাকার মধ্যে ১৩৫.০০ একর ভূমির উপর কারখানা, ৬১.৩০ একর ভূমিতে হাউজিং কলানী, জেটি ও ব্যাগিং প্ল্যান্ট ৩৫.০০ একর এবং ৭৮.৩২ একর ভূমিতে রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে।

 

সিইউএফএল কারখানা প্রতিষ্ঠার কারণে পার্শ্ববর্তী এলাকার রাস্তা-ঘাট ও অবকাঠামোর প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সিইউএফএল কারখানাতে একটি Export জেটি রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১৭০ মিটার এবং প্রস্থ ২৫ মিটার। এই Export জেটিটি সিইউএফএল ছাড়াও ডিএপিএফসিএল এর কাঁচামাল ফসফরিক এসিড আনলোডিং এর কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। তাছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট লাইটার জাহাজের মাধ্যমে সার সরবরাহের জন্য একটি লোকাল জেটিও রয়েছে।

 

সিইউএফএল কারখানায় প্রায় ৮০০ জন শ্রমিক, কর্মচারি, কর্মকর্তা নিয়োজিত আছে। এর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দাদেরও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই কারখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচীতেও কারখানাটি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে।

 

সিইউএফএল একটি কেপিআই-১ মানের সার কারখানা। এখানে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং পরিবেশের উপর খুব জোর দেয়া হয়। প্রতি বছর অত্যন্ত সাড়ম্বরে জাতীয় দিবসসমূহ পালন করা হয়। পরিবেশ সপ্তাহে বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম কারখানাটির প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে চালু আছে। কারখানায় একটি ইটিপি যা কারখানার জন্ম লগ্ন থেকে চালু আছে। উল্লেখ্য যে, পরিবেশ অধিদপ্তর কারখানাটি চালু অবস্থায় কারখানার আভ্যন্তর ভাগের তরল ও বায়বীয় বর্জ্য পরীক্ষা করে সন্তোষ প্রকাশ করে এবং কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র প্রদান করে।

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান- চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিঃ (সিইউএফএল)। এটি একটি লাভজনক ইউরিয়া সার কারখানা। সার উৎপাদন করে আমদানীর ‍নির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং কৃষি উৎপাদন তথা খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে সরকারের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে কারখানাটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।